Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পল্লী উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু ও স্মার্ট পল্লী

পল্লী উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু ও স্মার্ট পল্লী
মৃত্যুঞ্জয় রায়
র্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেছিলেন গোপালগঞ্জের এক নিভৃত পল্লী টুঙ্গিপাড়ায়। পল্লী বাংলার শস্য শ্যামল রূপ তাঁকে মুগ্ধ করলেও তৎকালীন পল্লীবাসীদের দুরবস্থা তাঁকে ব্যাথিত করেছিল। তাইতো কিশোর বয়স থেকেই তিনি খুঁজেছিলেন পল্লী বাংলার উন্নয়নের পথ। রাজনীতি ও ভাবনার মধ্যে বুনেছিলেন পল্লী উন্নয়নের বীজ। এ বছর মহান নেতার ১০৩তম জন্মদিনে তাঁর প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
একটি সুরম্য অট্টালিকা একদিনে হঠাৎ করে তৈরি হয় না। তার জন্য দরকার হয় সঠিক পরিকল্পনা ও মজবুত ভিত্তি। এ দেশে আজ পল্লীর যে ব্যাপক উন্নতি, তার ভিত্তিটাই গড়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গ্রামীণ শহর গড়ে তুলছেন যেখানে শহরের সব নাগরিক সুবিধা গ্রামেই থাকবে। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য এ এক অভূতপূর্ব উন্নয়ন ভাবনা। গ্রামে গ্রামে এখন আর শুধু বিদ্যুৎ নয়- রাস্তাঘাট, সেতু ও ইন্টারনেট সুবিধার মাধ্যমে গ্রামকে যুক্ত করা হয়েছে দেশ-মহাদেশের মহাসড়কে। ১৯৭২ সালে প্রণীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানের ষোড়শ অনুচ্ছেদের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব। সেখানে নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ধীরে ধীরে দূর করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এজন্য জোর দেয়া হয়েছে কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে গ্রামীণ কৃষির বিকাশ, শিক্ষার প্রসার, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ ইত্যাদির মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল পরিবর্তন। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা এই পাঁচটি মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে। তিনি চেয়েছিলেন নগরের নাগরিক সেবার সবই যেন গ্রামে থাকে।
১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত জনসভায় বঙ্গবন্ধু পল্লী উন্নয়নের জন্য তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘আমি ঘোষণা করছি যে, পাঁচ বছরে প্রত্যেকটি গ্রামে কম্পালসারি কো-অপারেটিভ হবে। বাংলাদেশে ৬৫ হাজার গ্রাম-কো অপারেটিভ হবে। প্রত্যেকটি মানুষ- যে মানুষ কাজ করতে পারে- তাকে কো-অপারেটিভের সদস্য হতে হবে। গ্রামে গ্রামে বহুমুখী কো-অপারেটিভ গড়ে তোলা হবে। ভুল করবেন না। এই যে নতুন সিস্টেমে যেতে চাচ্ছি তাতে আপনাদের জমি নেবো না। ভয় পাবেন না যে, জমি নিয়ে যাব, তা নয়। এ জমি মালিকের থাকবে। আপনার জমির ফসল আপনি পাবেন। কিন্তু ফসলের অংশ সবাই পাবে। অংশ যাবে কো-অপারেটিভের হাতে; অংশ যাবে গভর্নমেন্টের হাতে। এগুলো বহুমুখী কো-অপারেটিভ হবে। পয়সা যাবে তাদের কাছে, টেস্টরিলিফ যাবে তাদের কাছে, ওয়ার্কস প্রোগ্রাম যাবে তাদের কাছে। আস্তে আস্তে কাউন্সিল টাউটদের বিদায় দেয়া হবে। তা না হলে দেশকে বাঁচানো যাবে না। এ জন্যই ভিলেজ কো-অপারেটিভ হবে।’ বঙ্গবন্ধু কৃষি সমবায়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন ও সমবায় আন্দোলনকে কৃষি বিপ্লব ও পল্লী উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে পচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ফলে সময়ের কারণে সমবায় নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনাগুলো তিনি বাস্তবে রূপ দিয়ে যেতে পারেননি।  
স্বাধীনতার আগে পল্লী সমাজের লোকেরা ছিল চরম অবহেলিত। কারাগারের রোজনামচায় তাঁর স্মৃতিচারণে একদিকে যেমন ভেসে উঠেছে গ্রামের সেই দুরবস্থার আক্ষেপ, অন্যদিকে প্রকাশ পেয়েছে গ্রামের প্রতি তাঁর প্রগাঢ় ভালবাসা, তিনি সে বইয়ে লিখেছেন, ‘আজ আর গ্রামের কিছুই নাই। মনে হয় যেন মৃত্যুর করাল ছায়া আস্তে আস্তে গ্রামগুলোকে প্রায় গ্রাস করে নিয়ে চলেছে। অভাবের তাড়নায়, দুঃখের জ্বালায় আদম সন্তান গ্রাম ছেড়ে চলেছে শহরের দিকে। অনেকক্ষণ শুয়ে শুয়ে ছোটবেলার কত কাহিনীই না মনে পড়ল। কারণ আমি তো গ্রামেরই ছেলে। গ্রামকে আমি ভালোবাসি।’ বঙ্গবন্ধু পল্লীর লোকদের স্বাধীন বাংলাদেশের উপযোগী, গতিশীল ও প্রাণবন্ত এক পল্লী সমাজ বিনির্মাণে আত্মনিয়োগ করেছিলেন যার মধ্যে মিশেছিল তাঁর প্রত্যয়, প্রয়াস, দর্শন আর ভালোবাসা।
তিনি নিজেই ছিলেন সে সময় পরিকল্পনা কমিশনের চেয়ারম্যান। তাঁর গ্রামোন্নয়ন ভাবনার ওপর ভিত্তি করে তখন একাধিক পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। গ্রামোন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় তিনি গ্রহণ করেছিলেন এক্সটেন্ডেড রুরাল সোশ্যাল আপলিফটমেন্ট পাইলট প্রকল্প যার জন্য প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেই ৯০ লক্ষ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে তৎকালীন ১৯টি জেলার ১৯টি থানায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবর্তন করেন পল্লী সমাজ সেবা বা আরএসএস প্রকল্প যা দেশে বিদেশে প্রশংসিত হয়। সে প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে পল্লীর জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন। পরবর্তীতে সকল উপজেলাকে রাজস্ব বাজেটের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের সংগঠিত করে তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু প্রবর্তন করেন পল্লী মাতৃকেন্দ্র বা আরএমসি। প্রকল্পটির সফলতায় বিশ্বব্যাংক ও পরে বাংলাদেশ সরকারের অর্থসহায়তায় ৬৪ জেলার ৪৯২টি উপজেলায় এ প্রকল্পের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে যার মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও ক্ষমতায়ন করা সম্ভব হয়েছে।
একসময় পল্লীর অনেক মানুষ ছিল ভূমিহীন ও গৃহহীন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রামে সেসব ভূমিহীন-গৃহহীন অসহায় ছিন্নমূল মানুষদের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়, তাঁরা পায় আশ্রয়। কিন্তু ১৯৭৫ এ ঘাতকদের নির্মম বুলেটে প্রাণ হারান আমাদের প্রিয় নেতা, আর স্থবির হয়ে পড়ে অসহায় মানুষদের আশ্রয় দেওয়ার কার্যক্রম। বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেই তিনি বঙ্গবন্ধুর জনবান্ধব উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলোর বাস্তবায়ন আবার শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি ‘অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নের মডেল’ সামনে রেখে পিছিয়ে পড়া পল্লীবাসীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এর ধারাবহিকতায় কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন ও ধীরে ধীরে সারা দেশের গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তাঁর কার্যালয়ের তত্তাবধানে শুরু করেন আশ্রয়ণ প্রকল্প। ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু করে এ প্রকল্পের মাধ্যমে মোট ৫ লক্ষ ৭ হাজার ২৪৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে তাঁরা শুধু আশ্রয়ই পায়নি, খুঁজে পেয়েছে জীবিকা নির্বাহের পথ। দারিদ্র্য হ্রাসের মাধ্যমে তাঁরা যুক্ত হয়েছে উন্নয়নের মহাসড়কে। এ ছাড়া সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় ২৩৫টি পুরনো মুজিবকেল্লার সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব কেল্লা বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে উপকূলবাসীদের সাইক্লোন থেকে রক্ষার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। সরকার এগুলো আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী চিন্তা বাস্তবায়নের সত্যিকার রূপকার তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প এবং আমার গ্রাম আমার শহর কার্যক্রম। শহরের সব সুবিধা যেন গ্রামে মেলে তার ব্যবস্থা তিনি করে যাচ্ছেন। আজ গ্রামে এমন কোন বাড়ি পাওয়া যাবে না যেখানে টেলিভিশন নেই ও কাঁচা ঘর আছে, উন্নত হয়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা, গৃহহীনদের গৃহ দেয়া হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে আজ প্রতিটি উপজেলা ও প্রায় সকল গ্রাম শহরের সাথে সংযুক্ত, পল্লীর ঘরে ঘরে মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে গেছে পল্লী মানুষের হাতে হাতে। প্রতিটি ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে গ্রামীণ মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হার, কৃষিক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে যন্ত্রসেবা ও যৌথভাবে সমলয়ে আধুনিক প্রযুক্তিতে চাষাবাদ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি ইঞ্চি ভূমির সদ্ব্যবহার, উত্তরণ ঘটেছে বাণিজ্যিক কৃষির, কৃষিপণ্য রপ্তানির, গড়ে উঠেছে বিসিক শিল্প নগরীসহ অনেক গ্রামীণ কুটির শিল্প যার উৎপাদিত অনেক পণ্য এখন বিদেশে যাচ্ছে। পল্লীর মানুষের সঞ্চিত মূলধন কিভাবে উৎপাদনশীল কাজে বিনিয়োগ করা যায় সে উদ্দেশ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ফলে পল্লী এলাকায় মূলধন প্রবাহ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধু পল্লী উন্নয়ন ভাবনার যে বুনিয়াদ তৈরি করে দিয়েছিলেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পল্লী উন্নয়নের সেই অগ্রযাত্রা প্রবল বেগে এগিয়ে চলেছে।
বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশ অভিলক্ষ্য ২০৪১ গ্রহণ করেছে। সেখানে পরিকল্পনা করা হচ্ছে এ সময়ের মধ্যে গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে পৌঁছে যাবে ৫জি ইন্টারনেট সেবা, সবার কাছে থাকবে স্মার্টফোন, শতভাগ নাগরিক ব্যবহার করতে পারবে অত্যন্ত দ্রুতগতির ইন্টারনেট কাগুজে নোটের ব্যবহার প্রায় উঠেই যাবে। চারটি স্তম্ভের ওপর নির্মিত হবে সেই স্মার্ট বাংলাদেশের কাঠামো- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ যা বিস্তৃত হবে পল্লী অঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে, দেশ থেকে সমগ্র বিশ্বে। এদেশের পল্লীও হবে স্মার্ট পল্লী যেখানকার মানুষদের আধুনিক জীবনযাপনের সব সুযোগই থাকবে।

লেখক : কৃষি বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ বন্ধু ফাউন্ডেশন ও অতিরিক্ত পরিচালক (অব:), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫; মোবাইল: ০১৭১৮২০৭১০৭, ই- মেইল :kbdmrityan@gmail.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon